স্বামী -স্ত্রীর রক্ত _গ্রুপ মিলে (একরকম ) গেলে
স্বামী -স্ত্রীর রক্ত _গ্রুপ মিলে (একরকম ) গেলে ; বাচ্চা হবেনা .হলেই মিসক্যারেজ হবে বা জন্মগত ত্রুটি নিয়া জন্মাবে অথবা পেটে মারা যাবে এবং প্রতিবন্ধী হয়ে বেঁচে থাকবে –এ ধারনাগুলোর সত্যতা জানার চেস্টা থাকবে আজকের এ লেখায় । আমি বিশেষ ভাবে সবাইকে পড়ার অনুরোধ করছি :
প্রথমে রক্ত -গ্রুপ সম্বন্ধে আমরা কিছু জা। নি –
রক্ত -গ্রুপের নাম ইংরাজী ক্যাপিটাল লেটার দিয়া লেখা হয় যেমন ; A .B .AB & O. ।
রক্ত -গ্রুপের ধরনকে বলি পজিটিভ এবং নেগেটিভ ;প্রত্যেকটরই পজিটিভ বা নেগেটিভ ফর্ম আছে ; যেমন A positive ও A Negative .
দম্পতির রক্ত – গ্রূপ মিলে গেলে কোন সমস্যা হয়না -গর্ভধারণে . মিসক্যারেজও হয়না.সন্তান
. জন্মগতভাবে ত্রুটিযুক্ত হয়না ; সন্তানের শারীরিক ও মানসিকভাবে . বিকলাঙ্গতা পরিলক্ষিত হয়না . এমনকি সন্তান পেটেও মারা যায় না ।
তবে কিছু ব্যতিক্রম আছে যেমন স্ত্রী নেগেটিভ এবং স্বামী পজিটিভ হলে গবেষনায় (চলমান ) কিছু সমস্যার কথা বলা হয়েছে যে ; এরূপ গ্রুপের দম্পতির মহিলাসঙ্গিনীর রক্তে লীথাল বা মারণ জিন তৈরি হয় – যা ভ্রুন হতে বাঁধা দেয় বা ভ্রুন মেরে ফেলে । আমার বিশেষ অনুরোধ আপনারা এটা ভুলেও মনে করবেন না ; কারন এরূপ ঘটানোর অনেক কারন আছে ।
আগে গবেষনা চূড়ান্ত হোক । সত্য প্রমানিত হলে বিবাহের আগে রক্ত -গ্রূপ টেস্ট করে ডাক্তারের পরামর্শের ভিত্তিতে বিবাহ করা যেতে পারে ।
এরূপ দম্পতির আরো কিছু সমস্যা হতে পরে যার সঠিক সমাধান রয়েছে ; কাজেই চিন্তার কোন কারন নায় ।
এবার অসুবিধাগুলোর ধাপ ও সমাধান বিস্তারিত জানার চেস্টা করি –
স্ত্রী নেগেটিভ ও স্বামী পজিটিভ রক্তের হলে এবং প্রথম গর্ভস্থ শিশু পজিটিভ হলে বাচ্চার রক্ত মায়ের শরীরের রক্তে কোনোভাবে প্রবেশ করলে মা এর সিস্টেম এটাকে অপরিচিত সনাক্ত করে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য পজিটিভ রক্তের বিপরীতে এন্টিবডি (যোদ্ধা ) তৈরি করে । এ এন্টিবডি প্রথম বাচ্চার কোন ক্ষতি করেনা ।
তবুও বাচ্চা প্রসবের পর নাড় থেকে রক্ত নিয়া বাচ্চার রক্ত -গ্রুপ করা হয় ; বাচ্চার রক্ত -গ্রুপ নেগেটিভ হলে মাকে AntiRh ইনজেকশন দেওয়ার দরকার নাই কিন্তু বাচ্চার রক্ত গ্রূপ পজিটিভ হলে ডেলিভারির ৭২ ঘন্টার মধ্যে মাকে উক্ত ইনজেকশন দিতে হবে ; এই মেডিসিন মায়ের শরীরে বাচ্চার যে পজিটিভ রক্ত -কনিকা ছিল সেগুলোকে বিনস্ট করে । ফলে পরিবর্তিতে মা পজিটিভ রক্ত -ভ্রূপের বাচ্চা ধারন করলেও বাচ্চা ও মায়ের কোনই অসুবিধাও হয় না । সুতরাং মহিলার রক্ত-গ্রুপ নেগেটিভ এবং স্বামীর পজিটিভ হলে কোন সমস্যা নায় শুধু জ্ঞান ও সতর্কতার ও বাস্তবায়ন দরকার ।
উন্নত দেশগুলোতে এই ইনজেকশন গর্ভের ২৮ সপ্তাহে দেওয়া হয় ;কোনো কোনো দেশে ২৮ সপ্তাহে ১ টি এবং ৩৪ সপ্তাহে আরেকটা দেওয়া হয় । সবক্ষেত্রে একই রকম উপকার পাওয়া যায় ।
কারো মিসক্যারেজ বা এক্টোপিক প্রেগনেন্সি হলে বা তাৎক্ষনিক এই ইনজেকশন অবশ্যই নেগেটিভ রক্তের মহিলাকে দিতে হবে ।
যদি ইনজেকশন না নেওয়া হয় তবে পরবর্তীতে পজিটিভ বাচ্চা আসলে কি কি অসুবিধা হবে ?
পূর্বের গর্ভের পজিটিভ বাচ্চার কারনে মায়ের রক্তে তৈরি এন্টিবডি পরবর্তী বাচ্চার লাল রক্তকনিকাকে ভেংগে দিয়া বাচ্চার রক্তশূন্যতা .জন্ডিস .ব্রেন ও কিডনি ড্যামেজ করে ;অনেক সময় পেটেই বাচ্চা মারা যায় ; বাচ্চার পেটে ও সমস্ত শরীরে পানিও আসতে পারে । তবে ভয়ের কোনো কারন নেই যেহেতু শুস্ঠু সমাধান রয়েছে ।
প্রতিকার :
পেটেই বাচ্চার রক্ত বদলানো(এক্সচেঞ্জ ) হয় । তাছাড়া জন্মের পরও বাচ্চার রক্ত বদলানো হয় ।
ফটোথেরাপিও দেওয়া লাগে । মোটকথা উপযুক্ত চিকিৎসা আছে এবং ফলাফলও বেশ ভালো । কাজেই ঘাবড়ানোর অবকাশ নাই ।
নেগেটিভ গ্রুপের মহিলার নিজের শরীরে রক্ত নেওয়ার আগে সতর্কতা :
নেগেটিভ রক্তগ্রূপের মহিলারা পজিটিভ রক্ত নিবেন না এবং গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলবেন ।
তাছাড়া একই গ্রুপের ডোনার রেডি রাখবেন জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ।
পজিটিভ রক্ত নিলে কি হবে ?
প্রথমবার কিছু হবেনা কিন্তু দ্বিতীয়বার শরীরের সমস্ত পজিটিভ রক্ত কনিকা নস্ট হবে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেলে রক্ত -শূন্য হয়ে মৃত্যুও ঘটতে পারে ।
উপসংহার :
সবার রক্ত -গ্রুপ জানা জরুরি । পজিটিভ রক্তের ছেলেরা নেগেটিভ রক্তের স্ত্রী নিয়া টেনশন করবেন না – যেহেতু চিকিৎসা আছে । মনে মনে ভয় বা দ্বিধা রেখে জীবন অতিবাহিত করবেন না – দরকারে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়া ণিস্চিত থাকবেন ।
বিবাহের আগে রক্ত -গ্রুপ জানাও ভালো ।
ডাঃ নুরজাহান বেগম
সহযোগী অধ্যাপক (বন্ধ্যাত্ব ও প্রজনন)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়