গর্ভাবস্থায় জ্বর .মা এবং গর্ভস্থ বাচ্চার উপর ক্ষতিকর প্রভাব ও করনীয় :
আমরা কম -বেশি সবাই জ্বরকে রোগ বলি । জ্বর আসলে অন্য রোগের / সংক্রমনের লক্ষন ।
আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে -যা রোগ হতে বাঁধা দেয়। গর্ভাবস্থায় এই প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ; ফলতঃ গর্ভবতী রোগ – বালায় ভুগতেই থাকেন ।
কি কি কারনে জ্বর হয় ?
১।ভাইরাস সংক্রমন
২।ব্যাকটেরিয়া সংক্রমন
কি ধরনের জ্বর বেশি হয় ?
* সর্দি – জ্বর
* মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ
* টাইফয়েড
*ডেঙ্গু
* ম্যালেরিয়া
* হাম
* লিভারের প্রদাহ -বিশেষ করে E -Virus
সংক্রমন
* টনসিল এর প্রদাহ
* কানের প্রদাহ
মাড়ি বা দাঁতের প্রদাহ
স্বাসতন্ত্রের প্রদাহ
* ফুড পয়জন
*টোক্সোপ্লাজ়মা সংক্রমন
জ্বর কত হলে ভয়ের কারন ?
৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর বেশি হলে ।
তাপমাত্রা বেশি হলে মা ও বাচ্চার কি কি ক্ষতি হয় ?
বাচ্চার অসুবিধা –
গর্ভবতীর শরীরের তাপমাত্রা বাড়লে রক্তবাহী নালি প্রসারিত হয় বলে বাচ্চাতে রক্ত তথা অক্সিজেন ও পুস্টী সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে . ফলে বাচ্চা নিয়ম অনুযায়ী বৃদ্ধি পায়না (IUGR);এমন কি অনেকক্ষেত্রে বাচ্চা পেটে মারা যায় পূস্টির অভাবে ।
কিছু গবেষনায় প্রমান পাওয়া গেছে জ্বরাগ্রস্ত গর্ভবতীর গর্ভস্থ শিশুর
গর্ভপাত অথবা জন্মগত ত্রুটি সম্বলিত বাচ্চার আবির্ভাব হয় । জন্মগত ত্রুটি হাম ও টোক্সোপ্লাজ়মা সংক্রমনে বেশি হয় ।
মস্তিস্ক . চোখ ও কানের এবং হৃৎপিন্ড এর ত্রুটি বেশি পরিলক্ষিত হয় ।
মায়ের অসুবিধা : এবং
নির্দিষ্ট সময়ের আগে বাচ্চা প্রসব ।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার থলে ফুটো হওয়া বা পানি ভেংগে যাওয়া ।
রক্ত এবং পানিশূন্যতা ও ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যতা দেখা দেয় ।
বাচ্চা পেটে মারা গেলে রক্ত জমাট না বাধা সমস্যাই (DIC) রোগী মারা যেতে পারে ।
প্রসবের সময় ও প্রসব পরবর্তীতে রক্তক্ষরন প্রচুর হয় এবঙ ইনফেকশন ও হয় ।
করনীয় :
* সময় নস্ট না করে জ্বরের কারন নির্নয় করে ডাক্তারে দেওয়া মেডিসিন সেবন সহ উপদেশ মেনে চলতে হবে ।
ইনজেকশন ও নিতে হতে পারে ।
* হাসপাতালে ভর্তি জরুরি হতে পারে ।
* প্রচুর পানি পান করতে হবে ।
* পর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রাম নিতে হবে ।
পূস্টিমান সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে । ‘ সুতি ও পাতলা ড্রেস পরিধান করতে হবে ।
ব্যক্তিগত পরিস্কার -পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে ।
জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে ।
গোশোল / শরীর দ্পোন্জ করতে হবে ।
সংক্রমন আছে এমন রোগীর সংস্পর্শ ত্যাগ করতে হবে ।
ডাক্তারের নিয়মিত চেক আপ এ থাকতে হবে ।
সে সময় চিকিৎসা ছাড়া হাসপাতালে যাবেনা ।
নিজে বা সাধারন লোকের কথায় মেডিসিন খাওয়া যাবেনা ।
paracetamol ১০ gm/ kg এর বেশি দিনে খাওয়া যাবেনা । প্রেগনেন্সিতে azithromicin antibiotiC ও paracetamol নিরাপদ । তবুও ডাক্তারের পরামর্শে খেতে হবে ।
আমি জ্বরের রোগী ও গর্ভস্থ শিশুকে মৃত্যুবরন করতে দেখেছি ।
বংগ বন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিট তে (BSMMU) এক জ্বরের রোগীর রক্তক্ষরন হলে ১৮ ব্যাগ রক্ত শরীরে পরিসঞ্চালন সহ ICU support দেওয়ার পর রোগী বাঁচতেও দেখেছি ।
কাজেই গর্ভবতীর জ্বর হলে দেরি না করে ডাক্তার দেখার জন্য অনুরোধ রইলো ।
ডাঃ নুরজাহান বেগম
সহযোগী অধ্যাপক (বন্ধ্যাত্ব ও প্রজনন)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়