গর্ভাবস্থায় গর্ভফুলের অস্বাভাবিক অবস্থান (জরায়ুর মুখের কাছে বা জরায়ুর মুখ পুরো বা আংশিক আচ্ছাদন করে থাকা )/ প্লাসেন্টা প্রিভিয়া(placenta prevaeia ) মা ও গর্ভস্থ বেবি উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর :
গর্ভাবস্থায় গর্ভফুল নাড়ের মাধ্যমে মা থেকে বেবিতে অক্সিজেন ও পুস্টি সরবরাহ করে এবং বেবির বর্জ্য দূরীভূত করে । গর্ভফুলের স্বাভাবিক অবস্থান হচ্ছে জরায়ুর উপরের দিকে বা পাশে জরায়ুর ভিতরের দেওয়ালে লেগে থাকা ।
কোনো কারনে গর্ভফুল যদি জরায়ুর মুখের কাছে বা মুখ আংশিক অথবা সম্পূর্ন ঢেকে থাকে তবে গর্ভের দ্বিতীয় বা তৃতীয় ৩ মাসে গর্ভবতী অস্বাভাবিক রক্তক্ষরনের শিকার হন । ব্যথাহীন উজ্জল লাল রংএর রক্তক্ষরন হয় । এই রক্তক্ষরন হালকা .মাঝারি ও খুব বেশি হতে পারে ।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে জরায়ুর নিচে ফুল থাকলে গর্ভকাল বৃদ্ধির সাথে সাথে জরায়ু বড় হলে গর্ভফুলও উপরে উঠে যায় ; সুতরাং মা ও বাচ্চার কোন অসুবিধা হয়না । এমনকি নরমাল ডেলিভারি হতে কোনো অসুবিধা হয় না ।
৩৬ সপ্তাহের আগে হালকা রক্তক্ষরন হলে প্রেগনেন্সি চলমান রাখা যায় বেবির ফুসফুস পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত । কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরন হলে মা – বাচ্চার প্রাণনাশের আসংকা থাকে বলে সময়ের আগেই সিজার করা জরুরি হয়ে পড়ে । সিজারের সময় ও সিজারের পর প্রচুর রক্তক্ষরন হয় ।; কারন
প্লাসেন্টা প্রিভিয়া থাকলে ফুল থাকার স্থানটি সংকুচিত হয়না ।
৩৬ সপ্তাহের পর রক্তক্ষরণ হলে বেবির অপুস্টির ভয় থাকেনা বলে দেরি না করে মা ও বেবীকে সুস্থ্য রাখার জন্যই সিজার করে বেবি ও গর্ভফুলে বের করা হয় । সিজারের সময় গর্ভফুল বের করে জরায়ু সংকুচক ঔষধ দেওয়া হয় ।
USG এ প্লাসেন্টা প্রিভিয়া ধরা পড়লে গর্ভবতীকে বিশ্রামে এবং অবজারভেশনে রাখতে হয় । তাছাড়া –
ডোনার রেডি রাখা হয়
হাসপাতালে ভর্তি হয়ে বা হাসপাতালের নিকটে থাকতে হয় ।
যানবাহন রেডি রাখতে হয় ।
অর্থের জোগান রাখা জরুরি
প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হওয়ার ঝুঁকি সমূহ :
* আগে সিজার
* জরায়ুর টিউমার অপসারন
* D&C
* ঘন ঘন ৪ বা তার অধিক গর্ভধারণ
* প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হয়ে থাকলে
* একের অধিক বেবি একসাথে জরায়ুতে থাকলে যেমন জমজ ট্রিপ্লেট (৩টা ) কড্রিপ্লেট (৪ টা )।
* ধূমপান .মদপান নেশা – আসক্ত ড্রাগ
* কিছু রোগে বা কন্ডিশনে ফুল বড়ো হলে যেমন নেগেটিভ রক্ত- গ্রুপ .অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস.সিফিলিস ইত্যাদি ।
* সম্পূর্ন অজানা কারন ।
সতর্কতা :
সহবাস ও ভ্রমন নিষেধ
পেটে আঘাত দেওয়া যাবেনা
ভারী কাজ করা যাবেনা ।
প্লাসেন্টা প্রিভিয়া থাকলে বেবির পজিশন :
সম্ভবতঃ বেশি রক্তক্ষরন না হওয়ার জন্য খোদার কুদরতে বা প্রাকৃতিক নিয়মে বেবির মাথা জরায়ুর মুখের দিকে না থেকে উপরের দিকে বা আড়াআড়ি থাকে । পজিশন ২ টিকে য়থাক্রমে ব্রিচ বা ট্রান্সভার্স লাই বলে । এই সব পজিশনে সাধারনতঃ মা – বেবির সুস্থতার জন্য সিজার করা লাগে ।
বি : দ: প্রথম প্রেগনেন্সিতে সাধারনতঃ প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হয়না । প্লাসেন্টা প্রিভিয়া কারো কাম্য নয় – রুগী .পরিবারের সদস্য এবং ডাক্তার সবার জন্যই বিভীষিকাময় । আসুন আমরা সচেতন হই এবং অন্যদের সচেতন করি ।